মাজহারুল মিচেল: [৩] সারাদেশের ডেঙ্গুর বর্তমান অবস্থা দেখে অবশেষে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কাই সত্যি হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঈদের পর থেকে ডেঙ্গু যেন আরও শক্তিশালী হয়েছে।

[৪] স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায়, ১১টি জেলা বাদে চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে দেশের ৫৩টি জেলায়। ঢাকার বাইরে আক্রান্তের পরিসংখ্যানে এগিয়ে আছে চট্টগ্রাম। এ বিভাগে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ১২১৫ জন। চট্টগ্রামের পর রয়েছে বরিশাল বিভাগ। সেখানে রোগীর সংখ্যা ৭০৫ জন। এছাড়া ময়মনসিংহে ১৭০, খুলনায় ২৩৭, রাজশাহীতে ৫০, সিলেটে ৫৪ ও রংপুরে রয়েছে ৫৩ জন ডেঙ্গু রোগী।

[৫] স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ ডা. মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম জানান, দেশে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে বৃহস্পতিবার আরও দ্’ুজনের মৃত্যু হয়েছে। চলতি বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৬৪ জন। এছাড়া সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৬৬১ জন।

[৬] তারা জানান, আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৩৩ জন। আর ঢাকার বাইরে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বাকি ২২৮ জন।

[৭] বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে বর্তমানে ডেঙ্গু আক্রান্ত ২ হাজার ১২৯ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এর মধ্যে ১ হাজার ৪৯০ জন ঢাকায় এবং ৬৩৯ জন রোগী ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

[৮] সরকারি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১ জানুয়ারি থেকে ৬ জুলাই ২০২৩ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট ১১ হাজার ১১৬ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ৭ হাজার ৮৯৯ জন ও ঢাকার বাইরে ভর্তি হয়েছেন ৩ হাজার ২১৭ জন ডেঙ্গু রোগী।

[৯] অন্যদিকে, চিকিৎসা শেষে ৮ হাজার ৯২৩ জন হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। এদের মধ্যে ৬ হাজার ৩৫৯ জন ঢাকার ও বাকি ২ হাজার ৫৬৪ জন অন্যান্য জেলার বাসিন্দা।

[১০] বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শারফুদ্দিন আহমেদ জানান, প্রতিদিনি প্রায় ২০ জন করে এখানে ভর্তি হচ্ছেন। এটি রাজধানীসহ দেশের সব এলাকাতেই ছড়িয়ে পড়ার ফলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

[১১] ঢাকা মেডিকেল কলেজ শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. ইফফাত আরা শামসাদ জানান, বড়দের থেকে শিশুরা বেশি ঝুঁকিতে আছে। এ হাসপাতালে প্রায় প্রতিদিনই ৬/৭ জন করে শিশু শুধু ঢাকা থেকেই ভর্তি হচ্ছে। আর মফস্বলগুলোতে আরও ভয়াবহ অবস্থা।

[১২] কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার হুমায়ুন কবির জানান, গত কয়েকদিন ধরে হঠাৎ করেই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। প্রায় প্রতিদিনই ভর্তি হচ্ছে রোগী।

[১৩] ঐ হাসপাতালেই আরেক ওয়ার্ড মাস্টার রতন মিয়া জানান, এখনও সিট খালি আছে। তবে এ রকমভাবে চলতে থাকলে সিট সংকটও হতে পারে।

[১৪] আক্রান্তদের আতঙ্কিত না হয়ে বেশি বেশি তরল খাবার গ্রহণ করে রক্তের জলীয় অংশ পূরণের পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

[১৫] তারা বলেন, রক্তের যে জলীয় অংশ সেটি এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে বের হয়ে যায়। ফলে আমাদের হাইপোটেনশন হয়। তাই স্যালাইন, পানিসহ তরল খাবার খেয়ে রক্তের জলীয় অংশটি পূরণ করতে পারলে মৃত্যু অনেকাংশে এড়ানো যাবে।

[১৬] বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু এখন আর বর্ষা মৌসুমের আতঙ্ক নয়। ফলে এর ভয়াবহতা বাড়ছে। এটি মোকাবিলায় দায়িত্বশীল সংস্থাগুলোর তৎপরতার পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও ব্যাপকভাবে সচেতন হতে হবে।

[১৭] তারা জানান, ডেঙ্গু এখন সিজনাল নেই, সারা বছরই হচ্ছে। বৃষ্টি শুরু হলে এটা বাড়ছে। গত বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ জুন মাস থেকে শুরু হয়েছিল। কিন্তু চলতি বছর মে মাস থেকেই আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে গেছে। সম্পাদনা: শামসুল হক বসুনিয়া